শিখো বাংলায়.কম: গতকাল (১৭ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার বিকালে উচ্চতর ধর্মতত্ত্ব ও গবেষণাকেন্দ্র ‘মাহাদুল ফিকরি ওয়াদদিরাসাতিল ইসলামিয়্যা বাংলাদেশ’-এ এক প্রকাশনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় । প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী আম্মার আব্দুল্লাহ অনূদিত মুস্তফা সিবাঈর সীরাতে রাসূল সা. শিক্ষা ও সৌন্দর্য এবং আবুল হাসান আলী নদবীর ধর্মহীন ধর্মবিশ্বাস গ্রন্থদ্বয় নিয়ে আয়োজিত হয় এ প্রকাশনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন দেশের স্বনামধন্য আলিম, লেখক,প্রকাশক,সাহিত্যিক,চিন্তাবিদ।
মাহাদের শিক্ষার্থী ইফতেখার রাকিবের সঞ্চালনায় কুরআন তিলাওয়াত এবং স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে আরম্ভ হয় অনুষ্ঠান। মা’হাদের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শায়খ মুসা আল হাফিজের সভাপিতত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক, অনুবাদক মাওলানা ইয়াহয়া ইউসুফ নদবী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইস্তাম্বুল সাইন্স ও টেকনোলজি ফোরামের প্রতিনিধি মুহাম্মদ ইরফান, ইউনাইটেড মুসলিম উম্মাহ অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট শাহাদাত ইউসুফ, মুফতি ইব্রাহীম, মাওলানা ফারুক আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী মাওলানা সাজ্জাদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের সভাপতি শায়খ মুসা আল হাফিজ সীরাত ও নবিজীবনের আদর্শিকতার ব্যাপারে সমকালীন বিভিন্ন আপত্তির খণ্ডন করেন। ঐতিহাসিক বাস্তবতার আলোকে প্রমাণ করে দেখান মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সা. এর আদর্শের অনিবার্যতাকে।
শায়খ মুসা আল হাফিজ বলেন, মহানবীর সা. আদর্শের প্রতিটি দিক ও ধাপ প্রামাণ্যতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ এবং মানবকল্যাণ, সর্বজনীনতা ও ইনসাফের বিচারে অতুলনীয়। ফলে একজন মুসলিম যেমন একে অনুসরণ করে মহান মানুষ হতে পারেন, তেমনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কেউ যখনই আদর্শ মানুষ হবার চেষ্টা করবে, তারই জন্য শ্রেষ্ঠতম নমুনাটি হচ্ছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শ। এই আদর্শকে অবলম্বন করে আজকের দুনিয়ার সঙ্কটমুক্তির পথে অগ্রসর হতে হবে। যাবতীয় অন্যায় ও অমানবিকতাকে পরাজিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আমি বলছি, জ্ঞানদক্ষ লড়াইয়ের জন্য আমাদের একটা জামাত প্রস্তুত হওয়া দরকার। আমি মাওলানা হয়ে গেছি, এই হয়ে গেছি সেই হয়ে গেছি, এই জাতীয় আত্মতুষ্টিকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।

আম্মার আব্দুল্লাহকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, কেবল গ্রন্থের লেখক নয়, জীবন্ত গ্রন্থ হওয়া দরকার। অধ্যয়ন,অনুশীলন ও সাধনার পথ ধরে একেক গ্রন্থাগার হয়ে উঠতে হবে আমাদের।
প্রধান অতিথির আলোচনায় ইয়াহিয়া ইউসুফ নদভি বলেন, আমি এসেছি এই মা’হাদের টানে। শায়খ মুসা আল হাফিজের মোহাব্বতে। তার চিন্তা ও দর্শনকে স্বাগত জানাতে।
তিনি বলেন, আবুল হাসান আলী নদভী রহ. আমাদের অনেক কিছুই দিয়েছেন। বলা হয়, ‘বিষয় যদি ভাগ করা হয়, তাহলে প্রায় সাতশো বিষয়ের উপর কলম ধরেছেন শায়খ নদভী।’ আমাদের তাঁকে পড়তে হবে। তাঁকে ধারণ করতে হবে।
আলী নদবীর চিন্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কর্মপ্রয়াসের পিছনে বিশ্বকেন্দ্রিক চেতনা দরকার। আমাদের চিন্তা, চেতনা, তৎপরতা সবকিছুতেই বিশ্বব্যাপিতা থাকা চাই। কারণ, আমরা বিশ্বনবির উম্মত। তিনি রহমাতুললিল আলামীন।
তিনি লেখক হয়ে ওঠার উপকরণ সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে আম্মার আব্দুল্লাহ এর উদাহরণ টেনে বলেন, একজন মানুষ যদি লিখতে চায় শিখতে চায়, তাহলে কি করা উচিত, তা আমি এই আম্মার আব্দুল্লাহর মধ্যে দেখেছি। একজন লেখকের মধ্যে অবশ্যই থাকতে হয় সংকল্প, প্রতীতি, আত্মবিশ্বাস, প্রতিজ্ঞার মতো গুণ। এ সংকল্প ও আত্মবিশ্বাস যদি অর্জন করা যায়, তবে সহজ হয়ে যাবে একজন লেখকের ভালো এবং সাহিত্যসম্পন্ন লেখক হয়ে ওঠা। আমি আসলে আম্মার নয়, বরং একজন লেখকের লেখক হয়ে ওঠার গল্পটা এখানে বলছি।
মা’হাদের বিশেষত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘শুধু দরসিয়্যাত নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না, বরং আশপাশ, প্রতিবেশ, দেশ ও উম্মাহকে নিয়ে ভাবতে হবে,দায়িত্বপালন করতে হবে। এই ভাবনা ও দায়িত্বের অগ্রসর শিক্ষাই দিচ্ছে এই মা’হাদ।’
অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘লেখালেখি একটা মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ সাধনা। এর মাধ্যমে নিজের চিন্তা ও মনোভাবকে প্রকাশ ও প্রচার করা যায়। এক্ষেত্রে আমাদের যেটা মনে রাখতে হবে, তা হচ্ছে, লেখাটা যেন নিছক কিছু শব্দ আর বাক্য না হয়, বরং এর মধ্যে যেন রুহানিয়্যাত থাকে।’
বক্তারা আরো বলেন, ‘সাহিত্য হচ্ছে মানুষকে শাসন করার সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। সাংস্কৃতিক আগ্রসন হচ্ছে মানুষকে গোলাম বানানোর শক্তিশালী হাতিয়ার। তাই আমাদেরকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। তৈরি করতে হবে শিল্পমানসম্পন্ন আদর্শিক সাহিত্য। লেখালেখি করতে গিয়ে খেয়াল রাখতে হবে আধুনিক সময়ের শিক্ষিত পাঠক শ্রেণীর মেজাজ, রুচি এবং বোধগম্যতার পরিধি।’