মুফতি মাসউদুর রহমান ওবাইদী
চুপ থাকা নিয়ে চমৎকার একটি মিশরীয় প্রবাদ আছে- ‘কোলাহল যদি রূপার তৈরি হয়, নীরবতা তবে সোনার তৈরি!’ আরবী প্রবাদটাও অসাধারণ- ‘তুমি তখনি কথা বলো, যখন তা চুপ থাকার চেয়েও সুন্দর!’
চুপ থাকাকে কেন এতো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? কারণ জিহ্বা দ্বারা সংশ্লিষ্ট গুনাহগুলো আমাদের ভালো আমলগুলোকেও নষ্ট করে দিচ্ছে। আমরা সারাদিনে যত কথা বলি, তার বেশিরভাগই অপ্রয়োজনীয়, মিথ্যাচার ও গিবতে পরিপূর্ণ। অথচ মুখ নিঃসৃত প্রতিটি শব্দই লিপিবদ্ধ হচ্ছে।
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করুক না কেন, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।’ (সূরা কাফঃ১৮)
◾◾হাশরের ময়দানে দেখা গেল- আমাদের পূণ্যের চেয়ে পাপের পাল্লা ভারি। অবাক কান্ড! কখনো কারো ক্ষতি করিনি, কারো প্রতি অন্যায় করিনি, তারপরো এ অবস্থা কেন? তখন উত্তর আসবে, এগুলো তোমার মুখ নিঃসৃত পাপের ফল! এজন্যই আল্লাহর রাসূল (সা.) বলে গেছেনঃ ‘অধিকাংশ মানুষ জিহ্বা দ্বারা সংঘটিত পাপের কারণে জাহান্নামে যাবে।’ (তিরমিযিঃ১৬১৮)

◾তাহলে করণীয়? এর সমাধানও রাসূলুল্লাহ (সা.) দিয়ে গেছেন- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে নতুবা চুপ থাকে।’ (মিশকাত)
জেনে নেওয়া যাক জিহ্বা দ্বারা সৃষ্ট কবিরা গুনাহসমূহঃ
★১. মিথ্যা কথা বলা,
★২. মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া,
★৩. মিথ্যা শপথ করা,
★৪. গিবত করা,
★৫. পরনিন্দা করা,
★৬. অভিশাপ দেওয়া,
★৭. খোঁটা দেওয়া,
★৮. চোগলখোরি করা।
যেমন হওয়া উচিত আমাদের কথা বলার নীতিঃ
★১. কথা বলার আগে সালাম দেওয়া। (সূরা নূরঃ৬১)
★২. সতর্কতার সঙ্গে কথা বলা (কেননা প্রতিটি কথা রেকর্ড হয়)।
(সূরা ক্বফঃ১৮)
★৩. সুন্দরভাবে ও উত্তমরূপে কথা বলা। (সূরা বাক্বারাহঃ৮৩; বুখারীঃ১৪১৩)
★৪. অনর্থক ও বাজে কথা পরিহার করা। (সূরা নূরঃ৩; বুখারীঃ৩৫৫৯)
★৫. কন্ঠস্বর নিচু করে কথা বলা। (সূরা লুকমানঝ১৯, সূরা হুজুরাতঃ২-৩)
★৬. বুদ্ধি খাটিয়ে কথা বলা। (সূরা নামলঃ১২৫)
★৭. সঠিক কথা বলা ও পাপ মোচনের দুয়ার উন্মুক্ত করা। (সূরা আহযাবঃ৭১-৭২)
★৮. গাধার মতো কর্কশ স্বরে কথা না বলা। (সূরা লুকমানঃ১৯; তিরমিযীঃ৪৮৫৯)
★৯. উত্তম কথা বলে শত্রুকেও বন্ধুতে পরিণত করা। ( সূরা হা-মীম সাজদাহ্ঃ৩৪)
★১০. উত্তম কথায় দাওয়াত দেওয়া। (সূরা হা- মীম সাজদাহ্ঃ৩৪)
★১১. ঈমানদারদের কথা ও কাজ এক হওয়া। (সূরা ছফঃ২)
★১২. পরিবারের সদস্যদের প্রতি ক্ষমার নীতি অবলম্বন করা । (সূরা আরাফঃ১৯৯)
★১৩. মেয়েরা পরপুরুষের সঙ্গে আকর্ষণীয় ও কোমল ভাষায় কথা না বলা। (সূরা আহযাবঃ৩২)
১৪. ছেলেরা পরনারীর সঙ্গে আকর্ষণীয় ও কোমল ভাষায় কথা না বলা।
★১৫. মূর্খ ও অজ্ঞদের সাধ্যমত এড়িয়ে চলা। (সূরা ফুরকানঃ৬৩)
★১৬. হাসি মুখে কথা বলা।
আমরা আমাদের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি তো? নাকি জিহ্বাই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে?